Alternatives to Facebook : ফেসবুক ও মেসেঞ্জার বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, ডেটা সুরক্ষা, এবং ব্যবহারকারীর স্বাধীনতার দিকে ঝুঁকির কারণে অনেকেই বিকল্প খুঁজছেন। সামাজিক যোগাযোগের জন্য আরও নিরাপদ, কার্যকর, এবং সুবিধাজনক অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম খোঁজার ক্ষেত্রে কিছু বিকল্প রয়েছে যা ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের চেয়ে ভিন্ন সুবিধা প্রদান করে।
ফেসবুক বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, বিজ্ঞাপন কেন্দ্রিক ডেটা সংগ্রহ এবং অন্যান্য বিতর্কের কারণে অনেক ব্যবহারকারী ফেসবুকের বিকল্প খুঁজছেন। বর্তমানে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকের চেয়ে বেশি গোপনীয়তা সুরক্ষা এবং নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন ধরণের সুবিধা প্রদান করছে। এখানে আমরা ফেসবুকের ৬টি উল্লেখযোগ্য বিকল্প নিয়ে আলোচনা করবো, যা ব্যবহারকারীর নতুন চাহিদা পূরণে সক্ষম।
সূচীপত্র
MeWe
MeWe একটি গোপনীয়তা-কেন্দ্রিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যা ফেসবুকের অন্যতম প্রধান বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফেসবুক যেখানে বিজ্ঞাপন এবং ডেটা মাইনিংয়ের মাধ্যমে লাভবান হয়, সেখানে MeWe কোন বিজ্ঞাপন দেখায় না এবং ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি একটি বিজ্ঞাপন-মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন।
MeWe এর ব্যবহারকারীর প্রোফাইল, পোস্ট, মেসেজিং, এবং গ্রুপ ফিচার রয়েছে, যা ফেসবুকের মতোই কাজ করে। কিন্তু প্রধান পার্থক্য হলো, এখানে আপনার তথ্য এবং কার্যক্রম সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত থাকে। ফেসবুকের তুলনায়, MeWe আপনার তথ্য বিক্রি করে না, যার ফলে গোপনীয়তা সুরক্ষিত থাকে।
Diaspora
Diaspora একটি ওপেন সোর্স সামাজিক নেটওয়ার্ক, যা ফেসবুকের মতো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। এটি বিতরণকৃত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের নিজস্ব সার্ভারে বা “পড” এ তাদের ডেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এতে ব্যবহারকারীদের ওপর কেন্দ্রীয় কোনো সংস্থা বা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ থাকে না, যা ফেসবুকের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করে।
Diaspora-র একটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ব্যবহারকারীদেরকে তাদের পোস্ট এবং যোগাযোগের প্রাইভেসি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়। আপনি নিজের পডে থাকা বা অন্য কারো পডের মাধ্যমে সহজে যুক্ত থাকতে পারেন। আপনার তথ্যের উপর সম্পূর্ণ অধিকার থাকায় এটি একটি নিরাপদ ও গোপনীয় বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
Minds
Minds একটি বিকেন্দ্রীকৃত সামাজিক নেটওয়ার্ক, যা গোপনীয়তা এবং স্বাধীনতা প্রদানে মনোনিবেশ করে। এটি একটি ব্লকচেইন-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ব্যবহারকারীরা কন্টেন্ট শেয়ার করে আয় করতে পারে। Minds এর ফোকাস হলো স্বচ্ছতা, এবং এখানে ব্যবহারকারীরা তাদের পোস্টের মাধ্যমে টোকেন আয় করতে পারে, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন সেবা বা পণ্য কেনার জন্য ব্যবহার করা যায়।
ফেসবুকের তুলনায়, Minds ব্যবহারকারীদেরকে নির্দিষ্ট পোস্টের জন্য কন্টেন্ট র্যাঙ্কিং এবং মনেটাইজেশনের সুযোগ দেয়, যা অনেকেই স্বাধীন কন্টেন্ট নির্মাতাদের জন্য একটি বড় সুবিধা হিসেবে দেখে। এটির ব্লকচেইন ফিচার এবং উন্মুক্ত সোর্স কোড ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতার দিকে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে।
Ello
Ello একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, যা মূলত শিল্পী এবং ক্রিয়েটিভ পেশাজীবীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা এবং বিজ্ঞাপন-মুক্ত অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য পরিচিত। Ello ব্যবহারকারীদেরকে বিজ্ঞাপন দেখায় না এবং তাদের তথ্য বিক্রি করে না, যা গোপনীয়তার দিক থেকে একটি বড় সুবিধা।
ফেসবুকের তুলনায়, Ello আরও নির্দিষ্ট দর্শকের জন্য উপযুক্ত এবং এখানে শিল্পী, ডিজাইনার, এবং ক্রিয়েটিভ পেশাজীবীরা তাদের কাজ প্রদর্শন করতে পারে। এটি মূলত একটি সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম হলেও, Ello গোপনীয়তা এবং সৃজনশীল স্বাধীনতার জন্য একটি বিশেষ স্থান তৈরি করেছে।
Vero
Vero একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যা “সত্যিকারের সামাজিক” অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ফেসবুকের মতো বিজ্ঞাপন-মডেল থেকে বেরিয়ে এসে, Vero ব্যবহারকারীদেরকে সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক সেবা প্রদান করে। এর মানে হলো, এখানে কোন বিজ্ঞাপন নেই এবং ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। এটি ব্যবহারকারীদের পোস্ট এবং কন্টেন্ট শেয়ার করার ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
Vero এর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট যেমন বই, সিনেমা, সঙ্গীত, এবং ফটো শেয়ার করতে পারে। এটি প্রাইভেসি এবং ব্যক্তিগতকরণে খুবই গুরুত্ব দেয়, এবং ব্যবহারকারীরা তাদের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে আরও সৃজনশীল উপায়ে সক্ষম হন।
WT.Social
WT.Social একটি নতুন সামাজিক নেটওয়ার্ক, যা উইকিপিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস দ্বারা চালু করা হয়। এটি মূলত ব্যবহারকারীদের সঠিক এবং মানসম্পন্ন সংবাদ এবং তথ্য সরবরাহের দিকে মনোযোগ দেয়। WT.Social একটি বিজ্ঞাপন-মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ করে না। এখানে ব্যবহারকারীরা মিথ্যা তথ্য এবং গুজবের পরিবর্তে সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য পেতে পারে।
WT.Social ব্যবহারকারীদের নিউজ ফিড সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয় এবং কোন কন্টেন্ট তারা দেখতে চায় তা নিজেরাই বেছে নিতে পারেন। এটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে গুজব এবং মিথ্যা তথ্য রোধ করার জন্য একটি সুরক্ষিত জায়গা প্রদান করে।
Alternatives to Facebook messenger: ফেসবুক মেসেঞ্জারের বিকল্প
ফেসবুক মেসেঞ্জারের অনেক বিকল্প মেসেজিং অ্যাপ রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় বিকল্প অন্তর্ভুক্ত:
হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp)
একটি মেসেজিং অ্যাপ যা ফেসবুকের মালিকানাধীন। এটি তার এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ফিচারের জন্য জনপ্রিয়, যা নিশ্চিত করে যে শুধুমাত্র প্রেরক এবং প্রাপক বার্তাগুলি পড়তে পারে। WhatsApp ফেসবুকের মালিকানাধীন হলেও এটি ফেসবুক ও মেসেঞ্জার থেকে পৃথক এবং অনেক বেশি ব্যবহারকারী বান্ধব। এটি এনক্রিপটেড চ্যাটিং সিস্টেম প্রদান করে যা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখে। এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন এবং গ্লোবাল ব্যবহারকারীদের জন্য সহজতর প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় এটি একটি শক্তিশালী বিকল্প।
টেলিগ্রাম (Telegram)
Telegram একটি ক্লাউড-ভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ যা ইউজারদের বার্তা, ফটো, ভিডিও এবং ফাইল পাঠাতে দেয়। এটি উচ্চ লেভেলের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার জন্য পরিচিত।
Telegram একটি ওপেন সোর্স এবং ক্লাউড-ভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ। এটি গ্রুপ চ্যাট, বট, এবং চ্যানেল তৈরি করার সুবিধা দিয়ে থাকে। এতে সিক্রেট চ্যাট ফিচারও রয়েছে, যা এনক্রিপ্ট করা হয় এবং মেসেজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হয়ে যায়। Telegram এর মাধ্যমে আপনি নিরাপদে ফাইল শেয়ার করতে পারবেন, যা ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী।
সিগনাল (Signal)
Signal একটি মেসেজিং অ্যাপ যা গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। এটি সমস্ত যোগাযোগ সুরক্ষিত করতে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে এবং এটি ওপেন সোর্স। Signal গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করে যে শুধুমাত্র প্রেরক ও প্রাপক বার্তার বিষয়বস্তু দেখতে পারেন। এটি কোনও বিজ্ঞাপন নেই এবং কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে ডেটা বিক্রি করা হয় না। যারা প্রাইভেসি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাদের জন্য Signal একটি অসাধারণ বিকল্প।
স্নাপচ্যাট (Snapchat)
Snapchat মূলত ছবি ও ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ, তবে এটি মেসেজিং এবং কলিংয়ের সুবিধাও প্রদান করে। এর স্ন্যাপ স্ট্রিক এবং অস্থায়ী মেসেজিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের মধ্যে আকর্ষণীয় যোগাযোগ তৈরিতে সাহায্য করে। এটি অল্প সময়ের জন্য বার্তা বা ছবি প্রেরণের জন্য অনেকেই ব্যবহার করেন, যা গোপনীয়তার একটি ভিন্ন রূপ।
লাইন (LINE)
Line একটি মেসেজিং অ্যাপ যা এশিয়াতে জনপ্রিয়। বিভিন্ন ধরনের ফিচার যেমন ভয়েস এবং ভিডিও কল, গেমস এবং বন্ধুদের সাথে আপডেট শেয়ার করার জন্য এতে একটি টাইমলাইন ফিচার রয়েছে। Line জাপানে খুব জনপ্রিয় একটি অ্যাপ। এটি টেক্সট মেসেজিং, অডিও এবং ভিডিও কলের পাশাপাশি স্টিকার ও ইমোজির একটি বিশাল লাইব্রেরি সরবরাহ করে। এছাড়াও, Line Pay এবং Line Games এর মতো সুবিধাগুলি অ্যাপটির একটি নতুন মাত্রা প্রদান করেছে। এটি গোপনীয়তা সুরক্ষায়ও অত্যন্ত উন্নত।
ভাইবার (Viber)
Viber একটি মেসেজিং অ্যাপ যা ভয়েস এবং ভিডিও কল এবং নিরাপদ যোগাযোগের জন্য এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনও রয়েছে। Viber একটি ফ্রি মেসেজিং অ্যাপ যা অডিও এবং ভিডিও কল করার সুবিধা দেয়। এটি এনক্রিপ্টেড চ্যাটিং এবং কলের সুবিধা প্রদান করে, ফলে আপনার বার্তা নিরাপদ থাকে। Viber এর স্টিকার শপ এবং পাবলিক চ্যাট সুবিধাও অনেকের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে।
এটি লক্ষণীয় যে বিভিন্ন অ্যাপের বিভিন্ন ফিচার এবং ইউজারসংখ্যা থাকতে পারে, তাই আপনি বিবেচনা করতে চাইতে পারেন কোন অ্যাপটি আপনার প্রয়োজনের সাথে মানানসই।
বিকল্প ব্যবহারের কারণসমূহ
ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের প্রতি ব্যবহারকারীদের সন্দেহের প্রধান কারণগুলো হলো গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ডেটা সংগ্রহ। এই অ্যাপগুলো ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করতে পারে, যা অনেকেই পছন্দ করেন না। উপরন্তু, মেসেঞ্জারের এনক্রিপশন ব্যবস্থা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় কিছুটা দুর্বল বলে মনে করা হয়।
অন্যদিকে, Signal, Telegram, এবং Threema এর মতো অ্যাপগুলো ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে না এবং বার্তাগুলোকে এনক্রিপ্ট করে রাখে, যা আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষা করে। এছাড়াও, Slack বা Discord-এর মতো অ্যাপগুলো ব্যবসায়িক এবং টিম যোগাযোগের জন্য আরও কার্যকর।
উপসংহার
ফেসবুক এবং মেসেঞ্জার বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় হলেও, গোপনীয়তা, নিরাপত্তা, এবং ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ। এই ১২টি বিকল্প অ্যাপ ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের চেয়ে ভিন্ন এবং উন্নত সেবা প্রদান করতে সক্ষম। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি এসব অ্যাপের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিয়ে নিরাপদে এবং আরামে যোগাযোগ করতে পারেন।
(ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Twitter পেজ)
আরও পড়ুনঃ
Best meditation apps : আপনাকে প্রশান্তি দেবে যে ১০ টি অ্যাপ – Update 2024
মন্তব্য লিখুন