ইমেইল ব্যবহারকারীদের জন্য স্প্যাম ইমেইল একটি প্রচণ্ড বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় বা অবাঞ্ছিত ইমেইল আমাদের ইনবক্সে জমা হয়, যা শুধু জায়গা নষ্ট করে না, অনেক সময় ম্যালওয়্যার এবং ফিশিং আক্রমণের কারণও হতে পারে। এই স্প্যাম ইমেইলগুলোকে কার্যকরভাবে ডিলেট করা এবং ইনবক্সকে পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে স্প্যাম ইমেইল মুছে ফেলার কার্যকর উপায় ও প্রয়োজনীয় টিপস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের ইমেইল (Email) সার্ভিসের ব্যক্তিগত ব্যবহার তো রয়েছেই, তার সঙ্গে আবার রয়েছে প্রফেশনাল ক্ষেত্রও। আগে জিমেইল স্টোরেজ আনলিমিটেড থাকলেও এখন আর সেই অবাধ স্টোরেজ আর মেলে না। ব্যক্তিগত ফ্রি ব্যবহারকারীদের মাত্র ১৫ গিগাবাইটে সীমিত করে দেয়া হয়েছে স্টোরেজের ব্যবহার। এর মধ্যেই রয়েছে গুগল ফটোজ়, গুগল ড্রাইভ এবং জিমেল ও গুগল সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা স্টোরেজ।
তাই এখন অযাচিত বা ভারী ইমেইলে ইমেইলে ভরে যেতে পারে আপনার স্টোরেজ। আর স্টোরেজ একবার পূর্ণ হয়ে গেলে আপানার কোন মেইলই আর ঢুকবে না ইনবক্সে। এর ফলে হয় পুরনো ইমেইল ডিলিট করতে হয়, না হলে গুগল ফটোজ় থেকে অনেক ছবি সরিয়ে বা গুগল ড্রাইভ থেকে নানাবিধ ডকুমেন্ট ডিলিট করে স্টোরেজ খালি করতে হয়।
অন্যদিকে আপনার সব কিছুই ডিলিট করার যোগ্য না হয়, তাহলে আপনাকে টাকা খরচ করে স্টোরেজেরে ভলিউম বাড়িয়ে নিতে হয়। নয়তো প্রতিনিয়তই আপনার কাছে আসতে থাকবে সেই নোটিফিকেশন – স্টোরেজ ফুল, এখনই খালি করতে হবে!
খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, আপনার জিমেইলে অযাচিত বা ভারী ইমেইল অনেক বেশি। এক্ষেত্রে প্রোমোশনাল ইমেইল বা নিউজ়লেটার- এগুলো বারবার ডিলিট করলে আবার আসবে। বরং, সেগুলি ওপেন করুন এবং ‘আনসাবস্ক্রাইব’ বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে, আর এই ধরনের অযাচিত বা ভারী ইমেইল আর আসবে না।
সূচীপত্র
- স্প্যাম ইমেইল কি এবং কেন তা বিপজ্জনক?
- ১. ইমেইল ফিল্টার সেট করুন
- ২. স্প্যাম ফোল্ডার নিয়মিত চেক করুন এবং ডিলিট করুন
- ৩. অজানা ইমেইল ঠিকানার লিংক এ ক্লিক করবেন না
- ৪. ইমেইল সাবস্ক্রিপশন থেকে আনসাবস্ক্রাইব করুন
- ৫. স্প্যাম ফোল্ডারের ইমেইল ব্লক করুন
- ৬. অ্যান্টি-স্প্যাম সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
- ৭. আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস সতর্কতার সাথে শেয়ার করুন
- ৮. স্প্যাম ইমেইল রিপোর্ট করুন
- উপসংহার
স্প্যাম ইমেইল কি এবং কেন তা বিপজ্জনক?
সাধারণত অবাঞ্ছিত ইমেইল ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই প্রেরণ করা হয়। এগুলোতে প্রায়শই বিভিন্ন ধরনের প্রমোশন, বিজ্ঞাপন, ফিশিং লিংক, বা ম্যালওয়্যার থাকে যা ক্লিক করলে ব্যবহারকারীর ডেটা চুরি বা সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্প্যাম ইমেইলগুলির মধ্যে অনেক সময় ফেক অফার বা লটারি বিজয়ের মতো প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
এখন, আসুন আমরা জানি কিভাবে স্প্যাম ইমেইলগুলোকে ডিলেট করা যায় এবং আমাদের ইনবক্সকে পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখা যায়।
১. ইমেইল ফিল্টার সেট করুন
ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের মধ্যে অনেকেই স্প্যাম ইমেইল ফিল্টারিং সেবা দিয়ে থাকে, যেমন Gmail, Yahoo Mail, এবং Outlook। ফিল্টার সেটিংস আপনাকে নির্দিষ্ট ইমেইল অ্যাড্রেস বা কিওয়ার্ডের ভিত্তিতে স্প্যাম ইমেইলগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট করতে সহায়তা করতে পারে। এর মাধ্যমে, আপনার ইনবক্সে সরাসরি স্প্যাম ইমেইল আসার পরিবর্তে, সেগুলো আলাদা ফোল্ডারে চলে যাবে বা সরাসরি ডিলিট হয়ে যাবে।
কিভাবে ইমেইল ফিল্টার সেট করবেন?
- Gmail এ, “Settings” এ যান, তারপর “Filters and Blocked Addresses” থেকে নতুন ফিল্টার তৈরি করুন।
- নির্দিষ্ট ইমেইল অ্যাড্রেস বা কিওয়ার্ড নির্বাচন করুন এবং “Delete it” অপশন বেছে নিন। এর মাধ্যমে স্প্যাম ইমেইলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হবে।
অন্য ইমেইল প্ল্যাটফর্মেও অনুরূপ ফিল্টারিং অপশন পাওয়া যায়, যা আপনার ইমেইল পরিচালনা সহজ করবে।
২. স্প্যাম ফোল্ডার নিয়মিত চেক করুন এবং ডিলিট করুন
প্রায় সব ইমেইল প্ল্যাটফর্মই একটি স্প্যাম ফোল্ডার প্রদান করে, যেখানে সন্দেহজনক বা অপ্রয়োজনীয় ইমেইলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যায়। তবে অনেক সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইমেইলও ভুল করে স্প্যাম ফোল্ডারে চলে যেতে পারে, তাই এই ফোল্ডারটি নিয়মিত চেক করা উচিত।
স্প্যাম ফোল্ডারে যাওয়া ইমেইলগুলো যদি আপনি আর পড়তে না চান, তবে পুরো ফোল্ডারটি ডিলিট করে ফেলুন। এটি আপনার ইনবক্সে জায়গা বাড়াবে এবং ম্যালওয়্যার বা ফিশিং ইমেইল পড়ার ঝুঁকি কমাবে।
কিভাবে স্প্যাম ফোল্ডার ডিলিট করবেন?
- Gmail, Yahoo Mail, বা Outlook-এ “Spam” বা “Junk” ফোল্ডারে যান।
- “Delete all” বা “Empty Spam” বাটন চাপুন। এটি আপনাকে এক ক্লিকে সমস্ত স্প্যাম ইমেইল ডিলিট করতে সহায়তা করবে।
৩. অজানা ইমেইল ঠিকানার লিংক এ ক্লিক করবেন না
স্প্যাম ফোল্ডারের ইমেইলে থাকা লিংক বা অ্যাটাচমেন্টগুলো প্রায়শই ফিশিং বা ম্যালওয়্যার আক্রমণের কারণ হতে পারে। তাই অজানা বা সন্দেহজনক ইমেইল থেকে আসা লিংকগুলোতে ক্লিক না করে সরাসরি তা ডিলিট করুন। যদি কোন ইমেইল বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে না হয়, তবে সেটি পড়ার আগে তা স্প্যাম বা ফিশিং হিসেবে রিপোর্ট করুন।
৪. ইমেইল সাবস্ক্রিপশন থেকে আনসাবস্ক্রাইব করুন
অনেক সময় আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সাবস্ক্রাইব করে থাকেন, যা পরবর্তীতে অপ্রয়োজনীয় ইমেইল পাঠায়। এ ধরনের ইমেইলগুলোর থেকে রেহাই পেতে প্রতিটি ইমেইলে থাকা “Unsubscribe” বাটনে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন বাতিল করুন। এটি আপনাকে ভবিষ্যতে এ ধরনের স্প্যাম ইমেইল থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
সতর্কতা: কিছু স্প্যাম ইমেইলেও ভুয়া “Unsubscribe” লিংক থাকতে পারে, যা আপনার ডেটা চুরি করার উদ্দেশ্যে তৈরি। সুতরাং নিশ্চিত হয়ে বৈধ ইমেইল থেকে আনসাবস্ক্রাইব করুন।
৫. স্প্যাম ফোল্ডারের ইমেইল ব্লক করুন
কিছু ইমেইল প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট ইমেইল ঠিকানা বা ডোমেইন ব্লক করার ফিচার রয়েছে। যদি কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা থেকে বারবার স্প্যাম ইমেইল আসে, তবে তা ব্লক করে দিন। এর ফলে সেই ইমেইল অ্যাড্রেস থেকে আর কোন ইমেইল আপনার ইনবক্সে আসবে না।
কিভাবে ইমেইল ব্লক করবেন?
- Gmail-এ কোন ইমেইল ওপেন করে, তিনটি ডট (⁝) আইকনে ক্লিক করুন।
- “Block [Sender Name]” অপশনটি নির্বাচন করুন। এর ফলে সেই প্রেরক আপনাকে আর ইমেইল পাঠাতে পারবে না।
৬. অ্যান্টি-স্প্যাম সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
অনেকেই তাদের ইমেইল নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য অ্যান্টি-স্প্যাম সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। এই ধরনের সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্প্যাম ইমেইল শনাক্ত করে এবং ইনবক্স থেকে সেগুলোকে আলাদা করে ডিলিট করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, SpamTitan, SpamSieve, এবং Mailwasher Pro এর মতো সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
অ্যান্টি-স্প্যাম সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করে আপনার ইমেইল ইনবক্সকে পরিষ্কার এবং নিরাপদ রাখা খুব সহজ হয়ে যায়, বিশেষ করে যখন আপনার অনেক বেশি ইমেইল প্রতিদিন আসে।
৭. আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস সতর্কতার সাথে শেয়ার করুন
স্প্যাম ফোল্ডারে ইমেইল পাওয়ার প্রধান কারণগুলোর একটি হলো আপনার ইমেইল ঠিকানা অনেক ওয়েবসাইট বা সার্ভিসের সাথে শেয়ার করা। অনলাইনে যেকোনো ওয়েবসাইটে বা ফোরামে আপনার ব্যক্তিগত ইমেইল অ্যাড্রেস দেওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা করুন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও আপনার ইমেইল ঠিকানা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
এছাড়াও, অজানা ওয়েবসাইটে সাইন আপ করার সময় অস্থায়ী ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করতে পারেন, যা পরবর্তীতে ডিলিট করা যাবে। এর ফলে আপনার আসল ইমেইল ঠিকানায় স্প্যাম আসার সম্ভাবনা কমে যাবে।
৮. স্প্যাম ইমেইল রিপোর্ট করুন
অনেক ইমেইল প্ল্যাটফর্ম স্প্যাম ইমেইল রিপোর্ট করার ফিচার প্রদান করে, যা পরবর্তীতে একই ধরনের ইমেইল আসা প্রতিরোধ করে। যখনই আপনি কোনো সন্দেহজনক বা স্প্যাম ইমেইল দেখবেন, তা রিপোর্ট করুন। রিপোর্ট করার ফলে ইমেইল প্রোভাইডার সেই প্রেরককে ভবিষ্যতে আপনার ইনবক্সে স্প্যাম ইমেইল পাঠানো থেকে বিরত রাখবে।
কিভাবে স্প্যাম ইমেইল রিপোর্ট করবেন?
- Gmail-এ ইমেইল ওপেন করুন, তারপর তিনটি ডট (⁝) আইকনে ক্লিক করে “Report spam” অপশনটি নির্বাচন করুন।
উপসংহার
স্প্যাম ইমেইল মুছে ফেলা এবং ইনবক্সকে পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ স্প্যাম ইমেইলগুলি অনেক সময় আপনার ব্যক্তিগত ডেটা চুরি করতে পারে বা আপনার সিস্টেমে ম্যালওয়্যার প্রেরণ করতে পারে। ইমেইল ফিল্টার সেটিংস, স্প্যাম ফোল্ডার ব্যবস্থাপনা, এবং অ্যান্টি-স্প্যাম সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনি সহজেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
স্প্যাম ইমেইলের বিরুদ্ধে সচেতন থাকা, নিরাপদ প্র্যাকটিস মেনে চলা এবং নিয়মিত ইমেইল চেক করে ডিলিট করার মাধ্যমে আপনার ইনবক্সকে সুরক্ষিত এবং পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব।
(ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Twitter পেজ)
আরো পড়ুন:
মন্তব্য লিখুন