টেকনোলোজি

Starlink internet : স্টারলিংক ইন্টারনেট কী, কিভাবে কাজ করে, খরচই কত? জানুন বিস্তারিত

শেয়ার করুন
স্টারলিংক ইন্টারনেট : Starlink internet
শেয়ার করুন

Starlink internet : স্পেসএক্স ঘোষণা দিয়েছে, মে মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সরকার কিছু প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে, এবং বেসরকারি খাতে কিছু প্রতিষ্ঠান ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ শুরু করেছে।

ভাবুন তো, দেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে বসে আপনি ভিডিও কল করছেন, Netflix দেখছেন বা ফ্রিল্যান্স কাজ করছেন—একটুও ল্যাগ ছাড়া! অসম্ভব শোনালেও, এটাই হতে চলেছে বাস্তব। মে মাসের মাঝামাঝিতে চালু হচ্ছে স্টারলিংক ইন্টারনেট—এখন আর এটি শুধু বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নয়।

স্টারলিংক কী, এটি কিভাবে কাজ করে, এর খরচ কত, বাংলাদেশে কেমন সুবিধা পাবে ব্যবহারকারীরা, আর সত্যিই কি আড়িপাতার সুযোগ আছে? চলুন সহজ ভাষায় সব কিছু খুঁজে দেখি।

স্টারলিংক কী?

স্টারলিংক হলো স্পেসএক্স (SpaceX) এর একটি প্রকল্প, যার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। এটি মূলত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা দেয়। সাধারণ মোবাইল টাওয়ার বা ফাইবার অপটিক কেবলের উপর নির্ভর না করে, এটি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকা হাজার হাজার স্যাটেলাইটের সাহায্যে ইন্টারনেট সরবরাহ করে।

Starlink internet কিভাবে কাজ করে?

স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা দেয় লো-আর্থ-অরবিট (LEO) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। সোজা কথায়, হাজার হাজার ছোট উপগ্রহ একসাথে মিলে পৃথিবীর ওপর একটি ডিজিটাল জাল সৃষ্টি করে। সেই জালের মাধ্যমে আপনার বাসার ছাদে বসানো একটি ছোট রিসিভার ডিশ সিগন্যাল রিসিভ করে।

এই সিগন্যাল সরাসরি ইন্টারনেট রাউটারের মাধ্যমে আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপে পৌঁছে যায়। তাই গ্রাম হোক বা পাহাড়—স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন যেখানে খুশি।

বাংলাদেশে স্টারলিংকের (Starlink internet) আগমন: মে মাসে কী ঘটবে?

এই পরিষেবা শুরু হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন যারা এখনো ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে বঞ্চিত—অর্থাৎ পাহাড়, চর, দ্বীপ, সীমান্ত বা দুর্গম এলাকায় বসবাসরত মানুষ।

স্টারলিংক ইন্টারনেট খরচ কত? বাংলাদেশে দাম কেমন?

অনেকের প্রশ্ন—এই পরিষেবার স্টারলিংক ইন্টারনেটের মাসিক ফি ১৫ হাজার টাকা হবে কি?

আসুন পরিষ্কার হই।

  • প্রাথমিক ডিভাইস সেটআপ (ডিশ ও রাউটার): আনুমানিক ৫০,০০০ টাকা থেকে ৬০,০০০ টাকা।
  • মাসিক ফি: প্রাথমিকভাবে ধরা হচ্ছে ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে। তবে এটি ডলার রেট ও ট্যাক্সের উপর নির্ভর করবে।

এটি অনেকের কাছে বেশি মনে হতে পারে, কিন্তু যাদের বিকল্প নেই—তাদের কাছে এটি হতে পারে লাইফলাইন।

স্টারলিংকের সেবা ব্যবহার করতে হলে আপনাকে একটি কিট কিনতে হবে, যার মধ্যে থাকবে একটি রিসিভার (অ্যানটেনা), কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও পাওয়ার সাপ্লাই। এই কিটের দাম ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার (প্রায় ৪৩ হাজার টাকা থেকে ৭৪ হাজার টাকা)। মাসিক সেবার খরচও থাকে প্রায় ১২০ ডলার (১৫ হাজার টাকা)।

অবশ্যই, এই খরচ সাধারণ মানুষের জন্য বেশ বড় একটি বোঝা হতে পারে। তবে, এটি বিশেষত কোম্পানি বা অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি লাভজনক সেবা হতে পারে, যাদের জন্য দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ অপরিহার্য।

কে ব্যবহার করবে এই ইন্টারনেট?

যেখানে মোবাইল টাওয়ার নেই, সেখানে স্টারলিংকই একমাত্র সমাধান। ফ্রিল্যান্সার, শিক্ষক, গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যকর্মী, পর্যটন উদ্যোক্তা—সবাই এর উপকার পাবেন।

অনেক এনজিও এবং রিমোট স্কুলও এটি ব্যবহার শুরু করতে পারে, যাতে শিশুরা ডিজিটাল শিক্ষা পায়।

স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহার করব কিভাবে?

প্রথমে আপনাকে একটি ডিশ ও রাউটার কিনতে হবে, যেটি সরাসরি স্পেসএক্স বা স্থানীয় অনুমোদিত এজেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এরপর একটি অ্যাপের মাধ্যমে সেটআপ করতে হবে।

স্টারলিংকের অ্যাপ Google Play Store ও Apple App Store-এ পাওয়া যায়। একবার সেটআপ শেষ হলে, আপনি সারা দিন ব্রাউজ করতে পারবেন বিদ্যুৎ থাকলেই।

স্টারলিংক ইন্টারনেট খরচ প্রতি মাসে কেন বেশি?

স্টারলিংকের পিছনে ব্যয়বহুল প্রযুক্তি রয়েছে। প্রতিটি স্যাটেলাইট নির্মাণ, উৎক্ষেপণ, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সবই ব্যয়বহুল। এই খরচ ধীরে ধীরে কমতে পারে যখন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে।

একইভাবে, আপনি যদি শহরে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য অন্যান্য সেবা (WiMax, Fiber বা 4G) হয়ত সাশ্রয়ী বিকল্প হবে।

স্টারলিংক ইন্টারনেট আছে আড়িপাতার সুযোগ?

এটি একটি আলোচিত প্রশ্ন।

যেহেতু স্টারলিংক সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল পাঠায়, এবং ব্যবহারকারী নিজস্ব ডিভাইসে তা রিসিভ করে, তাই মাঝখানে কোন থার্ড পার্টির হস্তক্ষেপ তুলনামূলকভাবে কম। তবে যেহেতু এটি একটি প্রাইভেট কোম্পানির নিয়ন্ত্রিত পরিষেবা, তাই সার্ভার লেভেলে ডেটা ট্র্যাকিংয়ের কিছু ঝুঁকি থেকে যায়।

তবে NSA, PRISM-এর মতো নজরদারির তুলনায় এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

স্টারলিংক ইন্টারনেটের প্রতিষ্ঠাতা কে?

এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইলন মাস্ক। স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি পৃথিবীর বাইরে মানুষের জীবন বিস্তারের স্বপ্ন দেখেন। স্টারলিংক তার সেই স্বপ্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ইন্টারনেট একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে স্টারলিংক।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে

আমি নিজে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করি, এবং আমার অনেক ক্লায়েন্ট কানাডা, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকায় থাকতে সমস্যা হয় না, কিন্তু গ্রামের বাড়িতে গেলেই সংকট হয়। মোবাইল নেটওয়ার্কে কষ্ট করে একটি ফাইল আপলোড করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

স্টারলিংক চালু হলে আমি হয়ত গ্রামের বাড়িতে থেকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারব। একই সুবিধা পাবে আমার মতো হাজারো মানুষ।

স্টারলিংক এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ

স্টারলিংক, যা ২০১৫ সালে স্পেসএক্সের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিল এবং ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছিল, বর্তমানে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে সেবা প্রদান করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ভুটানে এটি চালু হয়েছিল এবং বর্তমানে বাংলাদেশেও এর কার্যক্রম শুরু হতে চলেছে। স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবাটি আমাদের দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্র, স্বাস্থ্যসেবা, এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে।

  • যদি আপনি দুর্গম এলাকায় থাকেন, তবে স্টারলিংক আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
  • প্রাথমিক খরচ একটু বেশি হলেও এর সুবিধা দীর্ঘমেয়াদে তা পূরণ করবে।
  • অফিস বা ইনস্টিটিউশনাল ব্যবহারের জন্য এটি একটি ভালো বিনিয়োগ।

পরিশেষে

মে মাসের মাঝামাঝিতে চালু হচ্ছে স্টারলিংক ইন্টারনেট। এটি শুধু একটি নতুন সেবা নয়, বরং প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত। যারা এখনো ডিজিটাল পৃথিবী থেকে বঞ্চিত, তাদের জন্য এটি আশার আলো। ভবিষ্যতে এ সেবা সবার নাগালের মধ্যে এলে, আমরা সত্যিকার অর্থেই বলব—ইন্টারনেট এখন সবার জন্য।

প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন-উত্তর (FAQ)

প্রশ্ন: স্টারলিংক বাংলাদেশে কোথা থেকে কিনতে পারব?

উত্তর: অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে অথবা সরাসরি স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে অর্ডার দেওয়া যাবে।

প্রশ্ন: বিদ্যুৎ ছাড়া এটি চলবে?

উত্তর: না। বিদ্যুৎ না থাকলে ডিভাইস কাজ করবে না।

প্রশ্ন: একাধিক ব্যবহারকারী কি একসাথে কানেক্ট হতে পারবে?

উত্তর: হ্যাঁ, WiFi রাউটারের মাধ্যমে একাধিক ডিভাইস কানেক্ট করা যাবে।

প্রশ্ন: এর জন্য কি স্পেশাল ল্যাপটপ লাগবে?

উত্তর: না। যেকোনো স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, অথবা ট্যাবলেট দিয়েই ব্যবহার করা যাবে।

(ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ)

শেয়ার করুন
লিখেছেন
হাইটেক বাংলা - ডেস্ক রিপোর্টার

ইনফরমেশন টেকনোলজি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের তথ্য, ব্লগ আপডেট সবসময় পাঠকের সামনে তুলে ধরাই হাইটেক বাংলা এর মূল লক্ষ্য। আমরা নিরপেক্ষ তথ্য সরবারহের জন্য সম্পূর্ণই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মন্তব্য লিখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পর্কিত আর্টিকেল
Apple Intelligence
টেকনোলোজি

Apple Intelligence – আইফোন ম্যাকবুকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় জীবন হয়েছে সহজ ও নিরাপদ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) বিকাশের সাথে সাথে, অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স (Apple Intelligence) তার নিজস্ব...

ইনফরমেশন টেকনোলজি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের তথ্য, ব্লগ আপডেট সবসময় পাঠকের সামনে তুলে ধরাই হাইটেক বাংলা এর মূল লক্ষ্য। আমরা নিরপেক্ষ তথ্য সরবারহের জন্য সম্পূর্ণই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সাবস্ক্রাইব

© কপিরাইট - ২০২২-২০২৪। হাইটেক বাংলা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সাবস্ক্রাইব