Iphone Fold: ফোল্ড আইফোন অ্যাপলের নতুন যুগে পা রাখার গল্প

অ্যাপেল অবশেষে তাদের বহু প্রতীক্ষিত ফোল্ড আইফোন নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা নিশ্চিতভাবেই প্রযুক্তি প্রেমীদের জন্য চমকপ্রদ খবর। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু প্রকাশ করা হয়নি, তবে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালেই বাজারে দেখা যেতে পারে অ্যাপেলের প্রথম ফোল্ডেবল আইফোন, যা হতে পারে ‘iPhone Fold’। জানা যাচ্ছে, ডিভাইসটির প্রাথমিক উৎপাদন পর্ব ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। একইসাথে, অ্যাপেল একটি ফোল্ডেবল iPad নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছে বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

ডিভাইসটির সম্ভাব্য ডিজাইন হবে Samsung Galaxy Z Fold সিরিজের মতো। অর্থাৎ, ফোনটি খুললে এটি পরিণত হবে একটি বড় স্ক্রিনের স্মার্ট ট্যাবলেটে, আর বন্ধ অবস্থায় থাকবে সাধারণ আইফোন আকৃতিতে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ফোনটির ভিতরের স্ক্রিন হবে প্রায় ৭.৮ ইঞ্চি, আর বাইরের স্ক্রিন প্রায় ৫.৫ ইঞ্চি, যাতে থাকতে পারে পাঞ্চ-হোল ক্যামেরা। অর্থাৎ, পরিচিত ডাইনামিক আইল্যান্ড ডিজাইন থেকে অ্যাপেল সরে আসতে পারে এই মডেলে। তবে প্রযুক্তির এই অগ্রগতির ফলে আইফোন ফোল্ডের দাম বেশ চড়া হতে পারে, যদিও অ্যাপেল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দামের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।

অ্যাপেলের প্রথম ফোল্ডেবল ফোন: কী আছে গুজবে?

অ্যাপেল এখনো অফিসিয়ালি ঘোষণা দেয়নি কবে নাগাদ তাদের ফোল্ডেবল আইফোন বাজারে আসবে, যা একদমই অপ্রত্যাশিত নয়—কারণ অ্যাপেল সবসময় পণ্যের উন্মোচনে চুপচাপ কৌশল নেয়। তবে এতে করে গুজব থেমে থাকেনি। নানা সময়, নানা সূত্র থেকে সম্ভাব্য রিলিজ টাইমলাইন উঠে এসেছে।

২০২০ সালের নভেম্বরেই শোনা যায়, অ্যাপেলের অন্যতম সাপ্লায়ার Foxconn ফোল্ডেবল আইফোনের প্রোটোটাইপ পরীক্ষা চালাচ্ছে এবং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরেই এটি বাজারে আসতে পারে। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্লেষক মিং-চি কুও ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এই ফোন আসবে ২০২৪ সালের মধ্যেই। যদিও এসব সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং ফোনটির দেখা মেলেনি, তবুও সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলো বলছে—ফোল্ড আইফোনের আগমন এখনও কিছু বছর দূরে।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, অ্যাপেল মূলত ২০২৬ সালে রিলিজের পরিকল্পনা করলেও, প্রকল্পটি পিছিয়ে ২০২৭ সালে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে, ২০২৫ সালের শুরুতে এক রিপোর্ট বলেছে, ফোনটির উৎপাদন শুরু হতে পারে ২০২৬ সালের প্রথম দিকে—যা আবারও ২০২৭ রিলিজের দিকে ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিভাইসটি ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়েই বাজারে আসতে পারে, যদি অ্যাপেল ২০২৫ সালের শেষের দিকে উৎপাদন শুরু করে।

২০২৫ সালের মার্চে, কুও আবারও জানান—ফোনটি ২০২৬ সালের শেষ অথবা ২০২৭ সালের শুরুর দিকে বাজারে আসতে পারে এবং এর ব্যাপক উৎপাদন শুরু হবে ২০২৬ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম বছরে অ্যাপেল ৩০ থেকে ৫০ লাখ ইউনিট বিক্রি করতে পারে। পরবর্তীতে, দ্বিতীয় প্রজন্মের ফোল্ড আইফোনসহ এই সংখ্যা দুই কোটিতেও পৌঁছাতে পারে ২০২৭ সালের মধ্যে।

বিশ্লেষক জেফ পু ২০২৪ সালের আগস্টে বলেন, আইফোন ফোল্ড এবং ফোল্ডেবল iPad একসাথে ২০২৬ সালে আত্মপ্রকাশ করবে। মার্চ ও এপ্রিল ২০২৫ এর বিভিন্ন রিপোর্টেও একই সময়ের সম্ভাবনার কথা বলা হয়, এমনকি কেউ কেউ সেপ্টেম্বর ২০২৬-কে সম্ভাব্য রিলিজ মাস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

ফাইনাল তারিখ এখনো নিশ্চিত নয়, তবে বেশিরভাগ সূত্র একমত — ফোল্ড আইফোন আসবে ২০২৬ অথবা ২০২৭ সালে। ভাঁজযোগ্য ডিসপ্লের মাধ্যমে এটি হবে আগের সব আইফোন থেকে একেবারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা, যা অ্যাপলের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী চমৎকারভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। খুলে নিলে এটি হবে একটি iPad Mini-র মতো বড় ডিসপ্লে, যা গেম ও অ্যাপ ব্যবহারে বাড়তি স্ক্রিন স্পেস এনে দেবে—এই ফিচারই হতে পারে iPhone Fold-এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।

iPhone Fold – ভাঁজের ভেতরে ভবিষ্যৎ

আপনি কি কখনও কল্পনা করেছেন—একটি আইফোন, যা ভাঁজ করা যায়? স্মার্টফোন জগতে প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। আর সেই বদলের সবচেয়ে আলোচিত নাম এখন “ফোল্ড আইফোন”। অ্যাপেলের নতুন এই ফোল্ডেবল ফোন নিয়ে গুজব, লিক, আর উত্তেজনার শেষ নেই। চলুন, একসাথে খুঁজে দেখি অ্যাপেল কী আনছে আমাদের জন্য—এবং কবে!

iPhone Fold এর সম্ভাব্য ডিজাইন

আইফোন ফোল্ড হবে এমন একটি ডিভাইস, যা খুললে প্রায় একটি iPad Mini-র মতো দেখাবে। গুজব বলছে, এর:

• ভেতরের ডিসপ্লে হতে পারে ৭.৮ ইঞ্চি,
• বাইরের স্ক্রিন হতে পারে ৫.৫ ইঞ্চি,
• এবং রেজোলিউশন থাকবে ২৭১৩ x ১৯২০ পিক্সেল (ভেতরের স্ক্রিনে)।

এর মানে হচ্ছে, আপনি একসাথে ফোন এবং ট্যাবলেট—দুইয়ের স্বাদ পাবেন একটি ডিভাইসেই।

স্ক্রিন, হিঞ্জ ও টেকনোলজির কথা

ফোল্ডেবল ফোন মানেই একটা চিন্তা—স্ক্রিন ক্রিজ বা ভাঁজের দাগ। তবে অ্যাপেল নাকি এমন একটি প্রযুক্তি আনছে, যা এই সমস্যাকে দূরে রাখবে।

• গুজব অনুযায়ী, এতে থাকবে লিকুইড মেটাল হিঞ্জ, যা টাইটানিয়ামের থেকেও দুই গুণ বেশি শক্তিশালী।
• স্ক্রিনে থাকবে আন্ডার-ডিসপ্লে ক্যামেরা, এবং উন্নত হাইব্রিড OLED প্রযুক্তি, যা একদিকে মজবুত, আবার ভাঁজযোগ্য।

এছাড়া, স্ক্রিনে থাকতে পারে self-healing coating, যা ছোটখাটো স্ক্র্যাচ নিজে থেকে সারিয়ে ফেলবে।

iPhone Fold এর ব্যাটারি ও পারফরম্যান্স

iPhone Fold এর ব্যাটারি হতে পারে 5000mAh, তাও আবার 3D স্ট্যাকড সেল প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। এর মানে, শক্তিশালী পারফরম্যান্সের সাথে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফ।

এছাড়া, নতুন Display Driver IC (DDI) ব্যবহারের ফলে পাওয়া যাবে আরও কম বিদ্যুৎ খরচ এবং পাতলা ব্যাটারি ডিজাইন।

ক্যামেরা সেটআপ

গুজব অনুযায়ী, ফোল্ড আইফোন-এ থাকতে পারে:

• দুইটি রিয়ার ক্যামেরা (মেইন ও আল্ট্রা-ওয়াইড),
• একটি ফ্রন্ট ক্যামেরা,
• এবং মেটা লেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত সেলফি ও ভিডিও কল অভিজ্ঞতা।

Apple iPhone Fold এর সম্ভাব্য দাম

এখানেই প্রশ্ন আসে, এত কিছু নিয়ে iphone fold price in Bangladesh কত হতে পারে?

বিশ্ববাজারে এর দাম হতে পারে $2,100 থেকে $2,500। বাংলাদেশে আনঅফিশিয়াল মার্কেটে এর দাম দাঁড়াতে পারে ৳২,৫০,০০০ থেকে ৳৩,০০,০০০ এর মধ্যে, কাস্টমস ও অন্যান্য চার্জসহ।

কে তৈরি করছে আইফোন ফোল্ডের স্ক্রিন?

প্রথমে শোনা গিয়েছিল LG Display স্ক্রিন তৈরি করবে। তবে এখন প্রায় নিশ্চিত—Samsung-ই হচ্ছে মূল স্ক্রিন সরবরাহকারী। Samsung এর অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ।

ফোল্ড আইফোন বনাম Samsung Galaxy Fold

Samsung অনেক আগেই Galaxy Z Fold ও Z Flip বাজারে এনেছে। তবে Apple একটু ধীরে, কিন্তু নিখুঁতভাবে এগোচ্ছে।

Samsung যেখানে ৪-৫ বছরের অভিজ্ঞতায় পৌঁছেছে চতুর্থ প্রজন্মে, Apple সরাসরি আনতে চায় একটি perfectly engineered iPhone Fold, যাতে না থাকে কোন স্ক্রিন ক্রিজ, না থাকে ব্যাটারি সমস্যা।

কেন এই ফোল্ড আইফোন হতে পারে গেম চেঞ্জার?

• দুই-একটির জায়গায় দুটি ডিভাইসের কাজ একসাথে
• প্রফেশনাল ইউজারদের জন্য মাল্টিটাস্কিং সুবিধা
• ভবিষ্যতের প্রস্তুতি—স্মার্টফোন নয়, স্মার্টডিভাইস

এক কথায়, এই ফোন শুধু ফোন নয়—একটি নতুন ডিজিটাল অভিজ্ঞতা।

ব্যবহারকারীদের জন্য পরামর্শ

যদি আপনি প্রযুক্তিপ্রেমী হন, কিংবা সবসময় নতুন জিনিস ট্রাই করতে পছন্দ করেন, তাহলে Apple iPhone Fold হতে পারে আপনার জন্য পারফেক্ট আপগ্রেড।

তবে ধৈর্য ধরুন। বাজারে আসতে এখনো সময় আছে। অপেক্ষা করুন সঠিক রিভিউ, আনবক্সিং ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্সের জন্য।

শেষ কথা

ফোল্ড আইফোন শুধু একটা ফোন নয়—এটা একটি বিবর্তনের শুরু। অ্যাপেল তার ডিজাইন, শক্তিশালী হার্ডওয়্যার এবং উন্নত সফটওয়্যার দিয়ে আবারও প্রমাণ করতে চায়—তারা ‘প্রযুক্তি মানে অ্যাপেল’ এই কথাটি এখনো সত্য।

আপনি কি প্রস্তুত এই নতুন যুগে পা রাখতে?

(ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ)